নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার দোহার উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা হিসেবে ইলোরা ইয়াসমিনের যোগদানের পর থেকেই কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ও অন্যকোন ডিভাইস নিয়ে তার অফিস কক্ষে প্রবেশে বাধা প্রদান করে আসছেন। এ উপজেলার প্রিন্ট ,ইলেকট্রনিক্স ও অনআইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা একাধিকবার ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশকালে বাঁধার মুখে পরার ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
১২ নভেম্বর, ২০২৪ সকালে উপজেলার এক সহকারী কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের ক্যামেরা বাইরে রেখে যাওয়ার শর্তে কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেন। ওই ঘটনায় ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ফিরে আসেন সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য আজ ১৪ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে কয়েকজন সাংবাদিক প্রবেশ করলে তাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা দেখা মাত্রই তিনি ক্যামেরা বাইরে রেখে আসার জন্য জানান। এ নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রজ্ঞাপনের কথা বলেন। তার দেয়া ওই প্রজ্ঞাপন সাংবাদিকদের হাতে আসলে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের বিষয়ে কোন কিছু পাওয়া যায়নি (জনপ্রশামন মন্ত্রনালয় যার প্রজ্ঞাপন স্মারক নং- ০৫ ০০ ০০০০ ০২১২৫ ০০২ ২০২৪ ৩৮) যার তারিখ ১৮অক্টোবর ২০২৪। এ সময় সাংবাদিকদের দাঁড়িয়ে রেখেই তিনি তার অফিস সহকারীকে প্রজ্ঞাপনের একটি কপি দিয়ে দিতে বললে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন দৈনিক নয়াদিগন্তের দোহার প্রতিনিধি শওকত আলী রতন,দৈনিক জণকণ্ঠের প্রতিনিধি সুজন খান, স্যাটেলাইন টেলিভিশন চ্যানেল এস এর প্রতিনিধি কাজী জোবায়ের আহমেদ,দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধি তানজিম ইসলাম, দৈনিক সংবাদ সারাবেলার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম, সাপ্তাহিক এশিয়া বার্তার স্টাফ রিপোর্টার সুমন হোসেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রনায়লের ওয়েব সাইডে প্রবেশ করে স্মারক নম্বর দিয়ে সার্চ করলে সংশ্লিষ্ট বিয়য়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এমন ঘটনায় দোহার উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভির আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ইউএনওর কক্ষে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশে কোন বাধা কিংবা নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমার জানা নেই।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, কোন বিষয়ে প্রতিবেদন করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য নেওয়া সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কোনো রিপোর্টের প্রয়োজনে কোন তথ্য প্রয়োজন হলে আবেদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তথ্য দিতে বাধ্য। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের স্পোকস পারসন হিসেবে ওই কর্মকর্তা যদি তথ্য না দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করার বিধান রয়েছে। অভিযোগ দায়েরের ফলে বহু সরকারি কর্মকর্তাদেরকে তথ্য কমিশনে তলব ও শাস্তি প্রদানের নজির রয়েছে।
কোনো একটি প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্য প্রয়োজন হলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য বক্তব্য প্রদান করা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি।
ঢাকা জেলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সম্পাদক এইচ,এম আমিন বলেন, সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করবেনা তাহলে কি নিয়ে প্রবেশ করবে? তিনি এঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ইউএনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাহলে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না।
দোহার প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সোহেল রানা জানান, সাংবাদিকের সাথে এমন আচরন কোন ভাবেই কাম্য নয়। ইউএনও যদি কোন সংবাদের বিষয়ে বক্তব্য না দেন এবং ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশে বাধা দেন সাংবাদিক সংগঠণ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
দোহার প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, দায়বদ্ধতা থেকে প্রশাসনের বক্তব্য অবশ্যই প্রতিটি সংবাদে থাকতে হবে। সেখানে ইএনওর এমন অসৌজন্যমূলক আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ঢাকা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন সংবাদের বিষয়ে জানতে এবং বক্তব্য নিতে যাবে সেখানে ক্যামেরা নিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ইউএনও এর এধরণের অসৌজন্যমূলক আচরনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।